বিশেষ প্রতিনিধি:
কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীতে চাঞ্চল্যকর রমিজ আহমদ (৫৫) খুনের ঘটনার এক মাস পার হয়েছে। এখনো আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। বরং নিহতের ভাই ও স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে পাল্টা মামলা দিয়েছে আসামীপক্ষ। আর মামলায় সাক্ষি দেখানো হয়েছে কারান্তরীন এবং ঘটনা সম্পর্কেই জানেনা এমন লোকদেরকে। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।
সুত্র জানায়, ১১ আগষ্ট সকালে রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের উল্টাখালী এলাকার নিজ জমিতে ট্রাক্টর নিয়ে চাষ দিচ্ছিলেন রমিজ আহমদ। এ সময় তার ছোট ভাই ছব্বির আহমদ জমিতে চাষ দিতে নিষেধ করলে বাকবিত-া হয়। এতে যোগ দেয় ছব্বির আহমদের ছেলে রাসেল মিয়া, তাজুল ইসলাম, বেদার মিয়া, দিদার মিয়া, নেজাম উদ্দিন, ইউছুপ মিয়া, তাদের ভগ্নিপতি বদিউল আলম। বাকবিত-ার এক পর্যায়ে ছব্বির আহমদরা রমিজকে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তিনি জখম হয়ে ঢলে পড়লে অন্য স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত রমিজ আহমদের ছেলে লুৎফর রহমান বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা করেন। মামলা নং-২৯৩/১৭। ঘটনার দিনই ছব্বির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। খুনের ঘটনার এক মাস পার হয়েছে। কিন্তু বাকী আসামীদের একজনও গ্রেফতার হয়নি। রামু থানার ওসি লিয়াকত আলী খান সুষ্ঠু তদন্ত শেষে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানান।
এদিকে খুনের মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে অভিযোগ করেন বাদী লুৎফুর রহমান। তিনি জানান, খুনের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পাল্টা মামলা দিয়েছে আসামীপক্ষ। বসতঘর-খামার ভাঙচুর ও লুটের অভিযোগে খুনের ঘটনার এজাহারভুক্ত ১ নং আসামী রাসেলের স্ত্রী নুর আয়েশাকে বাদী বানিয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়। মামলা নং-সিআর ৯৮০/২০১৭।
স্থানীয়রা জানায়, ১১ আগষ্ট সন্ধ্যায় রমিজ আহমদের মরদেহ বাড়ীতে নেয়ার পর ছব্বির আহমদের বসতবাড়ীতে ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। শত শত এলাকাবাসী তা প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু ঘটনার দুই সপ্তাহ পরে নিহত রমিজ আহমদের ভাই ও স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় ‘খুনের মামলায় পলাতক’ আসামী এবং ঘটনা সম্পর্কে জানেননা এমন ব্যক্তিদেরও সাক্ষি দেখানো হয়েছে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- ভাঙচুর হয়েছে ১১ আগষ্ট। মামলা হয়েছে ২৭ আগষ্ট। ঘটনা দেখানো হয়েছে ১৩ ও ১৪ আগষ্ট। এ মামলায় খুনের মামলায় কারান্তরীন আনোয়ারা বেগমকে (এজাহারভুক্ত ৯ নং আসামী) প্রত্যক্ষ সাক্ষি বানানো হয়েছে। একইভাবে সাক্ষি দেখানো হয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য মুসলেম উদ্দিন ও আবদুল করিমকে। যারা ঘটনার সম্পর্কেও জানেনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিআর ৯৮০/২০১৭ নং মামলার ৭ নং সাক্ষি মুসলেম উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল আমার ওয়ার্ডে নয়। ঘটনাটি শুনেছি, চোখে দেখিনি। কেনইবা আমাকে সাক্ষি দেয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। একই কথা বলেন ৬ নং সাক্ষি আবদুল করিম। তিনি বলেন, কোথায় ভাঙচুর হয়েছে, কে ভাঙচুর করেছে, তা দেখা তো দূরের কথা- ঘটনা সম্পর্কেও শুনিনি। সাক্ষি তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।